রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় বড় বিনিয়োগ, চাঁদাবাজদের হুমকিতে পিছু হটছেন উদ্যোক্তারা

রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় বড় বিনিয়োগ, চাঁদাবাজদের হুমকিতে পিছু হটছেন উদ্যোক্তারা

রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় বড় বিনিয়োগ চাঁদাবাজদের হুমকিতে পিছু হটছেন উদ্যোক্তারা, নিম্নমানের সামগ্রী নিতে বাধ্য করছে রাজনৈতিক দলাশ্রিত চাঁদাবাজরা

মতিহার বার্তা ডেস্ক : নগরমুখী জনস্রোতের ফলে বাড়ছে রাজশাহী মহানগরীর পরিসর। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে নগরীতে তৈরি হচ্ছে উঁচু উঁচু ভবন। সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানি রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় বড় বিনিয়োগ করছে। যৌথভাবে জমি কিনে বসবাসের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করছেন অনেকেই। উদ্যোক্তারা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহীতে আবাসন নির্মাণ খাতটি চাঁদাবাজদের একটি অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। চাঁদাও দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলাশ্রিত এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ করলে হেনস্তা করা ছাড়াও নির্মাণ উপকরণ চুরি, লুট ও ভাংচুরের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে তাদের। ফলে সম্ভাবনাময় এ খাতটি থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর তেরখাদিয়া নতুন সড়কের পাশে একটি প্লট কিনে দশ তলা ভবন করছেন রাজশাহী কলেজসহ আরও কয়েকটি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের পরিচিতজনরা।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ভবনটি নির্মাণের শুরু থেকেই এ ভবনে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছিল দরগাপাড়ার উজ্জ্বল ও তার ভাই সিটি কর্পোরেশনের সাফাই কর্মচারী সুজ্জ্বলসহ তাদের সহযোগীরা। নিম্নমানের সামগ্রীর কারণে নির্মাতারা উজ্জ্বলদের কাছ থেকে উপকরণ নেয়া বন্ধ করে দেন। এরপর উজ্জ্বল ও তার বিলশিমলা এলাকার সহযোগীরা কয়েক দফা ভবনে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য হুমকিও দিয়ে আসেন।
১২ জুন উজ্জ্বল ও সুজ্জ্বলের নেতৃত্বে মাইনুল ও বাপ্পীসহ একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিকদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা ভবন নির্মাণ তদারককারী রাজশাহী কলেজের সহকারী অধ্যাপক এহসানুল হককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা ছাড়াও নির্মাণ উপকরণ ভাংচুর করে।
১৩ জুন অধ্যাপক এহসানুল হক বাদী হয়ে উজ্জ্বলসহ ৭ জনের নামে রাজপাড়া থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। রাজপাড়া থানার মামলা নং-১৫, তাং-১৩-০৬-১৯। এ মামলার আসামী বাপ্পীকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে আদালতে চালান করেছে পুলিশ তবে উজ্জল , সুজ্জল, মাইনূল পলাতক রয়েছে।
তেরখাদিয়া এলাকার একজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তিনি বছর দুয়েক আগে জমি কিনে তিন তলা বাড়ি নির্মাণ শুরু করলে একদল চাঁদাবাজ এলাকারই একজন নেতার অনুসারী পরিচয় দিয়ে ইট, রড ও সিমেন্ট সরবরাহের বায়না ধরে। প্রথমে তাদের কাছ থেকে কিছু নির্মাণসামগ্রী নেয়ার পর দেখা যায় সেসব খুবই নিম্নমানের। পরে তাদের না করে দেয়া হলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে তারা। একপর্যায়ে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হতে হয় তাকে। পরে চাঁদা মিটিয়েই শেষ করতে হয়েছে ভবন নির্মাণের কাজ। নগরীতে এমন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য সব এলাকার ভবন নির্মাতাদের সামাল দিতে হচ্ছে বলে জানান কয়েকজন নির্মাতা।

অভিযোগে জানা গেছে, নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকা, শালবাগান, তেরখাদিয়া, নওদাপাড়া, বিনোদপুর, কুমারপাড়া, লক্ষ্মীপুর, কাশিয়াডাঙ্গাসহ মধ্যনগরী ও নগরীর প্রান্তিক এলাকাগুলোতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। ঢাকার একটি ডেভেলপার কোম্পানির একজন ম্যানেজার বলেন, তাদের ৬টি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে নগরীতে। যখনই নতুন ভবনের সাইনবোর্ড ঝোলানো হয় সেখানে থাকা ফোন নম্বর নিয়ে প্রথমে ফোন করে এলাকার চাঁদাবাজদের দলনেতারা। ফোন করেই তারা বলে, আমাদের এলাকায় ভবন করছেন করেন কিন্তু ইট, সিমেন্ট, রড কিন্তু আমাদের কাছ থেকেই নিতে হবে। না নিলে ঝামেলা হবে। কোনো ডেভেলপার রাজি না হলে নির্মাণসামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে সাইনবোর্ড। শ্রমিকদের মারধরের ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। প্রায় প্রত্যেক ডেভেলপার ও ভবন নির্মাতাকেই চাঁদাবাজদের ম্যানেজ করে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে রাজশাহী ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান লাভলু যুগান্তরকে বলেন, নগরীতে ভবন নির্মাণ শুরু করলেই সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হরেক রকমের চাঁদাবাজিসহ নানান প্রতিবন্ধকতা। এসব মোকাবেলা করেই তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব বিষয়ে রাজশাহীর মেয়র ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। তারা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজির সমস্যাটা কমেনি। ফলে রাজশাহীতে সম্ভাবনাময় এ খাতটি থেকে অনেকেই সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

ভবন নির্মাণে চাঁদাবাজির ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার হুমায়ুন কবির জানান, কোনো ডেভেলপার বা ভবন নির্মাতা চাঁদাবাজির হুমকি পেলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দিতে পারেন। চাঁদাবাজদের বিষয়ে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেবে পুলিশ। যুগান্তর।

মতিহার বার্তা ডট কম ২৪  জুন ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply